ত্রাণের নৌকা দেখলেই ছুটে আসছে বন্যার্তরা
ব্রহ্মপুত্র ও ধরলাসহ জেলার নদ-নদীগুলোর পানি নতুন করে বৃদ্ধি না পেলেও দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসিরা। বন্যাদুর্গত এলাকায় শত শত স্কুল বন্ধ হওয়ায় ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। ভেঙে পড়েছে সড়ক ও রেল যোগাযোগ। অন্যদিকে, বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও ওষুধ সঙ্কটে ভুগছেন বন্যার্তরা। ত্রাণবাহী কোন নৌকা দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তারা।
বন্যার্তরা সারাদিনে একবেলা রান্না করে কোন রকমে জীবনটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। দিন যত যাচ্ছে বন্যাকবলিত এসব মানুষের খাবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। সব সময় পানিতে থাকার কারণে দিচ্ছে পানিবাহিত রোগ।
সর্বত্র চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। কোনও কোনও এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেশিরভাগ চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি এখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় এসব এলাকার মানুষ নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় দিন পার করছে। একবেলা খেয়ে না খেয়ে ঘরের ভিতর পাতা উঁচু মাচায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে রাত পার করছে তারা। এসব এলাকার মানুষজন দিনভর চেয়ে থাকছে ত্রাণের নৌকার আশায়। কিন্তু দিন শেষেও ত্রাণের কোনও নৌকার দেখা না পাওয়ায় আবারও অপেক্ষা করছে পরের দিনের।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) পর্যন্ত বন্যার কারণে জেলায় প্রাণ হারিয়েছে ১২ জন।
জেলা সদরের পাটেরশ্বরী বাঁধে ২দিন যাবত পরিবার নিয়ে দিন পার করছেন জোসনা। স্বামী-সন্তান-শাশুড়িসহ ৮জনের পরিবার তার। সাথে ৩টি গরু ও ছাগল নিয়ে বাঁধে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। এখনও কোন প্রকার ত্রাণ পাননি বলে জানান তিনি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, জেলার ৯ উপজেলার ৬২টি ইউনিয়নের ৮২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪০ কিলোমিটার। পানিবন্দি রয়েছে ৪ লাখ ২২ হাজার মানুষ। ৪২ হাজার ৩৫১ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৩ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার মানুষ। ভেসে গেছে ২৩টি ব্রিজ। বানভাসি ২৫ হাজার পরিবার ৪০৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার ফলে কুড়িগ্রামের সঙ্গে ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সড়ক ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে বিকল্প নৌপথে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৬৫২ হেক্টর চাল, ১৭ লাখ ৫ হাজার টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
No comments:
Post a Comment